ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

জেলায় ঈদকে সামনে রেখে কাপড় ব্যবসায়ীদের গলাকাটা বাণিজ্য সবক্ষেত্রে অভিযান পরিচালিত হলেও কাপড় ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে নেই

কক্সবাজার প্রতিনিধি :::
রমজান মাস আসলে মুদির দোকান, খুচরা ও পাইকারী দোকান, মাছ বাজার, কাচা বাজারসহ সব ধরণের দাম বাড়া পণ্যের দোকানে অভিযান চালানো হয়। কিন্তু রমজান মাসে সব থেকে বেশি গলাকাটা ব্যবসাকারি কাপড়ের দোকানের বিরুদ্ধে কোন অভিযান পরিচলনা করে না প্রশাসন। সাধারণ মানুষের দাবী ঈদকে সামনে রেখে সব চেয়ে বেশি মুনাফা করে কাপড়ের দোকানদাররা। কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে তারা ৩/৪ গুন লাভে কাপড় বিক্রি করে। তারা কিভাবে কাপড় আনে, কত টাকা দিয়ে আনে, সেটা কত টাকা দিয়ে বিক্রি করছে সব কিছুর একটা প্রাথমিক ধারণা প্রশাসনের থাকা দরকার। এবং খুব বেশি মুনাফাকারীদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা এবং সে সব অসৎ ব্যবসায়িদের শাস্তি প্রদানের ব্যবস্থা করা জরুরী। তাই দ্রুত কাপড়ের দোকানের লাগাম টেনে ধরার দাবী জানিয়েছে সর্বস্থরের মানুষ।
কক্সবাজার শহরের টেকপাড়া এলাকার বাসিন্দা স্কুল শিক্ষক দিলারা খানম বলেন, আমরা প্রায় দেখি রমজান মাস আসলে প্রশাসন মাছ বাজার, তরকারীর বাজার, খুচরা এবং পাইকারী দোকান সব জায়গায় অভিযান চালিয়ে বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখতে কাজ করে। এবং এতে কিছু কাজ হয়ও। কিন্তু প্রতি বছর ঈদকে সামনে রেখে সব চেয়ে বেশি যারা গলাকাটা ব্যবসা করে তারা হলো কাপড়ের দোকানদার। কারন ঈদে নতুন কাপড় নেওয়া আমাদের মুসলিম পরিবারের জন্য বাধ্যতামূলক তাই ধনী গরীব সবাই ঈদে নতুন কাপড় নেয়। সেটাকে পুঁজি করে কাপড়ের দোকানের ব্যবসায়িরা যে কোন কাপড়ের দাম বহুগুন বাড়িয়ে বিক্রি করে। যে কাপড় ঈদের মাস খানেক আগে বিক্রি করছে ৬০০/৭০০টাকা সে কাপড় ঈদ বাজারে ১৫০০টাকার নীচে নেই। আর কিছু নতুন কাপড় আসলেও সেটার দাম হাকা হয় আকাশচুম্বি। এতে ক্রেতাদের খুব বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়। কক্সবাজার সিটি কলেজের অধ্যাপক আজিম উদ্দিন বলেন, যে শার্ট সাধারণত ১০০০/১২০০ টাকা সেই শার্ট ঈদে ২০০০ টাকার নীচে নেই। একই ভাবে জুতা, পাঞ্জাবী থেকে শুরু করে সব ধরণের দাম বেড়ে যায়। আমিও মনে করি বাজার মূল্যের মধ্যে কাপড়ের দোকানকে এক নাম্বারে রেখে তাদের লাগাম টেনে ধরা দরকার। তারা কিভাবে কাপড় আনে, সেটা কত টাকা দিয়ে আনছে আর কত মুনাফায় বিক্রি করবে একটা ন্যূনতম ধারণা থাকা দরকার। এবং কাপড়ের দোকানে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তাদের কাপড় কিনার রশিদ চেক করে কি পরিমান তারা লাভ করছে সেটা জনগণকে জানানো দরকার। পৌরসভার কর্মকর্তা নারী নেত্রী শামিমা আকতার বলেন, অনেক সময় দেখে যায় একটি শাড়ীর দাম বলছে ৬০০০ টাকা পরে সেটা ১৫০০ টাকা দিয়ে দিচ্ছে। তাহলে কিভাবে তারা দাম হাকাচ্ছে আমার মতে প্রতিটি দোকানে তারা কি পরিমান লাভে ব্যবসা করবে একটা নীতি থাকা দরকার। শুধু বাজারে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে দাম স্থিতিশীল রাখলে হবে না সাধারণ জনগণের স্বার্থে কাপড়ের দোকানে খুব বেশি নজর দেওয়া দরকার। তারা কিভাবে ব্যবসা করছে সেটা প্রশাসনের জানা থাকা এবং সাধারণ মানুষ যেন জানে সে ব্যবস্থাও করা দরকার।
কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর একেএম ফজলুল করিম চৌধুরী বলেন, এটা জাতি হিসাবে আমাদের দূভার্গ্য যে রমজান আসলে শুধু বাজারের দ্রব্য মূল্য নিয়ে কথা বলতে হয়। অথচ বিভিন্ন হিন্দু বা খ্রিস্টান রাষ্ট্রও রমজানকে সম্মান করে ব্যবসায়িরা সব ধরণের জিনিসের দাম কমিয়ে দেয়। কাপড় চোপড়সহ রোজাদার দের ব্যবহারের সবকিছুতে তারা বিশেষ ছাড় দেয়। কিন্তু আমাদের ব্যবসায়িরা কিভাবে মানুষকে জিম্মি করে দাম বেশি নিয়ে অতি মুনাফা করবে সেটা চিন্তা করে। বিশেষ করে ঈদকে সামনে রেখে কাপড়ের দোকানে ব্যবসায়িরা মনে করে এটাই তাদের ব্যবসার প্রধান সময়।এই মন মানসিকতা পরিহার করতে হবে। আইন দিয়ে সব কিছু হয় না, কিছু জিনিস আছে নিজেকে বুঝতে হবে। আর আমি দেখেছি কিছু দিন আগে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কাপড়ের দোকানের ব্যবাসয়িদের ক্রয় রশিদ রাখতে বলেছে। না হলে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেবে বলে কড়া হুঁশিয়ারী দিয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক আনোয়ারুল নাসের বলেন, কাপড়ের দোকানদাররা যদি খুব মুনাফা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন বলেন, আমরা চাইনা কোন ব্যবসায়িকে জেল জরিমানা করা হওক। আসলে আইন দিয়ে সবকিছু হয় না। ব্যবসায়িদের নিজ থেকে কিছু মানসিকতা পরিবর্তন করা দরকার। তবে যারাই দাম বাড়িয়ে বিক্রি করতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা অব্যাহত আছে থাকবে।

পাঠকের মতামত: